Thursday, 27 October 2016

History...... Second World War

সহজ ইতিহাস : (পার্ট --৩ )
(দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ)
__________________
আমরা আগে ১ম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী ঘটনা জেনেছি। আজ জানব, দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের কথা।
পৃথিবীর সব কাজেরই নাকি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ যেন তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর, জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষনা করা হয়। ২য় ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানিকে বাধ্য করা হয় যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে। জার্মানিকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে গিয়ে বিশ্ব নেতারা জার্মানিকে একটা ব্যর্থ ও ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত বন্দোবস্ত করলেন, যাতে অন্য কোন রাষ্ট্রই ভবিষতে এমন দু:সাহস না করে।
জার্মানিকে দেয়া শর্ত ও পরিণাম ছিল অনেকটা এমন ::
★প্রতি বছর জরিমানার নির্দিষ্ট অংশ দিতে হবে
★জার্মানির বেশ বড় অংশ ছেড়ে দিতে হবে
★সেনাবাহিনী নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি বাড়ানো যাবে না।

★নৌবাহিনী অধিক সংখ্যক রাখা যাবে না।
★ কোন ধরনের অস্ত্র আমদানি, রপ্তানি,তৈরি করা যাবেনা ইত্যাদি।
এর ফলে হলো কি, জার্মানি খুব কম সময়েই একেবারে ছাড়খার হয়ে গেল। বেকারত্ব তুঙ্গে ওঠল। যুদ্ধ তো বন্ধ হলো, যুদ্ধের রেশ গেল না।
জার্মানির অর্থনীতি একদম জিরো হয়ে গেল। জনগন দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠল। একেতো অভাব তারওপর ঐ চুক্তিতে যায় যায় অবস্থায়। তারা রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে, কষ্টে একাকার হয়ে সুযোগের অপেক্ষায় রইল।
এভাবে কাটল বেশ কয়েক বছর। বিশ্বনেতারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর জার্মানির ভালো শিক্ষা হয়েছে, এই বুঝে মোটামুটি খুশিও ছিলেন।
এদিকে, ১৯২২ সালে ইতালিতে এক নেতার উদয় হলো। নতুন শাসন ব্যবস্থা শুরু হলো। নাম ছিলো, মুসোলিনি।
ইতালির লোকজন পূর্বের হারানো গৌরব রোম কে নিয়ে আফসোস করতো। আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের জিত নিয়ে, এক ধরনের আত্ম গরিমায় ভোগত। তারা ভাবতো, আমরা ও কম কীসে? চাইলে হতে পারি সাম্রাজ্যবাদী। এরই মাঝে, প্রবল ব্যাক্তিত্ব নিয়ে আবির্ভূত হন মুসোলিনি। নতুন ধারনা ফ্যাসিবাদের প্রবর্তন করেন। ভালো বক্তা হওয়ার সুবাধে বেশ জনপ্রিয়তা পান। আর ক্ষমতায় আসার পর হয়ে ওঠেন একনায়ক।
১৯৩৩ সাল :
নাটকীয়তার শুরু হয় জার্মানিতে।এক নতুন স্বপ্নে বিভোর নেতা। ভালো বক্তা হওয়ার সুবাধে, সেও খুব দ্রুত পরিচিত হয়ে ওঠে আর গঠন করে নাৎসী বাহিনী। ১৯৩৩ সালে চ্যান্সেলর হয়েই গড়ে তোলেন বিশাল সেনাবাহিনী। ত্যাক্ত, বিরক্ত তো ছিলোই, অসীম সাহসী আর উগ্র এই নেতা ভাবতো জার্মান জাতিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। আর এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ কে বেছে নিলো। হয়তো আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু যুদ্ধ, হিংসা আর উগ্রতার কী ভয়াবহ ক্ষতিপূরণ যে বিশ্ব দিতে যাচ্ছিল সেই বিষয়ে নিতান্তই অজ্ঞ আর বেখবর ছিলো এ লোক।নাম এডলফ হিটলার।
এদিকে, জাপান ও সাম্রাজ্যবাদে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সে তার লালসার দৃষ্টি বিশাল প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের দিকে দেয়। ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়ায় আক্রমন করে বসে।।১৯৩৭ সালে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। আর জাপানের এই সফলতার কারন ছিলো চীন নিজেই।
চীনে তখন গৃহযুদ্ধ চলছিল।
নিজেদের মধ্যে বিভক্তি যে কতটা ক্ষতিকর, এই ঘটনা
তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।
এদিকে,
ইতালি করলো কি, ১৯৩৫ সালে ইথিওপিয়া (আবিসিনিয়া)আক্রমন করে বসল। ফ্রান্স ও বৃটেন জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়ালে, ইতালিকে আগের মত পাশে পাওয়ার আশায় তেমন কিছুই বললো না। কিন্তু জার্মানি ইতালিকে একেবার সাপোর্টই দিয়ে দিলো। ফলে হিটলার আর মুসোলিনি ধীরে ধীরে কাছাকাছি আসতে লাগলো।
বৃটেন জার্মানির সাথে একটা সমঝোতা করলো যে, জার্মানি চাইলে নৌবাহিনী বাড়াতে পারে। বৃটেন ভাবল, সমঝোতার কারণে হয়তো জার্মানি তার সাথে যুদ্ধে জড়াবে না। কিন্তু হিটলারের মনে ছিল, নিতান্তই অন্য মতলব।
১৯৩৮ সাল, হিটলার অস্ট্রিয়া আক্রমন করে বসল।এবং দখল করে নিল। ইতালি তো পাশে আছেই। রাশিয়াও চুপ। মাথা ব্যাথা শুরু হলো, ফ্রান্স ও বৃটেনের। তারা ঠিক করলো, একে তো জবাব দিতেই হয়।
তারা জানালো যে, যদি জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে তবে, তারা এর জবাব দিবে।অর্থাৎ পাল্টা আক্রমন করা হবে।
হিটলার এসব কানে না নিয়ে ১৯৩৯ এ চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমন করলো।
রাশিয়া করলো কি, হিটলারের সাথে ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট মলোটভ -রিবেনট্রপ নামে এক চুক্তি করে বসলো। এ চুুক্তি অনুযায়ী, জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমন করে, জয়ী হলে অর্ধেক অংশ রাশিয়াকে দিবে বললো।
ফলে, ২য় বিশ্বযুদ্ধে চিত্র কিছুটা পাল্টে গেল। ১ম বিশ্ব যুদ্ধের মিত্র শক্তির ইতালি, রাশিয়া এবার সেই পক্ষে ছিলনা। তারা এবার অক্ষ শক্তির সাথে। জাপানও অক্ষ শক্তির পক্ষেই।
অন্যদিকে, বৃটেন আর ফ্রান্সের এলাইড ফোর্স। একে সাপোর্ট করেছিল কমেনওয়েলথভুক্ত দেশ সমূহ, যেমন কানাডা, নিউজিল্যাণ্ড, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। আর ভারতীয় উপমহাদেশ তো ছিলই কলোনী। তাই, বৃটেন ভারতের সৈনিকও ব্যবহার করেছিল।
১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯....
হিটলার রাশিয়ার সাথে চুক্তির পরপরই পোল্যাণ্ড আক্রমন করলো। অতর্কিত আক্রমণে পোল্যাণ্ড দিশেহারা। খুব সহজেই হিটলার পোল্যাণ্ড দখল করলো এবং রাশিয়াকে আধা অংশ দিল।যা জার্মানি ১ম বিশ্বযুদ্ধে হারিয়েছিল। হৃত সম্পত্তির মতই মনে হলো জার্মানির।শুরু হয়ে গেল, ইতিহাসের ভয়াবহ, নৃশংসতম এবং ঘৃণ্য মহাযুদ্ধ।
আবার, এই বছরই ইতালি আবার আলবেনিয়া দখল করে নিল। মিত্র শক্তি করল কি, জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল।
অক্ষশক্তি, ১৯৪০ সালে খুব ভালোই নৈপুণ্য দেখালো। ফ্রান্সকে দখল করে ইতালি ও জার্মানি ভাগ করে নিলো। আরো ছোট ছোট বেশ কিছু সাফল্য পেল।
রাশিয়া তখনও অক্ষ শক্তির পাশে।
এদিকে জাপান, ঝামেলায় পড়লো। চীনের গৃহযুদ্ধ শেষ। তাই, চীনে সুবিধা করতে না পেরে, দ.এশিয়ায় নজর দিল। কিন্তু বাধা আমেরিকা। সাগরে মার্কিন নৌবহর।
তারওপর, আমেরিকা করলো কি, জাপানকে তেল দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো।
১৯৪১, সালে অক্ষ শক্তি দুটো বড় ভুল চাল চেলেছিল।জার্মানি আত্ম গরিমায় তুষ্ট হয়ে, রাশিয়ায় আক্রমণ করে বসে।
জাপান, মার্কিন একটা নৌবহর, নাম পার্ল হারবারে আক্রমণ করে।
ব্যাস, উল্টো পথে যুদ্ধ! রাশিয়া এবং আমেরিকা উভয়ই যোগ দিল মিত্র শক্তির পক্ষে।
১৯৪২ সালে, অক্ষ শক্তি কষ্টে কাটালো, মিত্র শক্তি শক্তিশালী হলো।
১৯৪৩ সালে, নাটকীয়তায় মোড় নিল।
একে একে অক্ষ শক্তিকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটানো হয়। মিত্র শক্তি ফিরে পায়, হারানো অংশ।
রুমানিয়া, বুলগেরিয়া সহ অনেক দেশ অক্ষশক্তি হারিয়ে ফেলে।
আরও, বড় কাহিনী হলো, যখন রাশিয়া ইতালী আক্রমন করে, ইতালির বিশাল অংশ দখল করে নিলো। মুসোলিনি কে গ্রেফতার করা হলো।
১৯৪৪ সালে, ফ্রান্সকেও মুক্ত করা হলো। অক্ষ শক্তি একদম দুর্বল হয়ে পড়লো। ইতালি হার মেনে নিতে বাধ্য।
১৯৪৫ এ এসে মুসোলিনির মৃত্যু এবং ৩০ এপ্রিল হিটলার ও স্ত্রী সহ বাংকারে প্রাণ দিয়ে দিল।
জার্মানির আত্ম সমর্পনে ইউরোপে যুদ্ধ শেষ। কিন্তু জাপানে চলছিল। আগস্টে জাপানে লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান নামক বোমা ফেলা হলো। হিরোশিমা ও নাগাসাকি তে। পারমাণবিক বোমা।
অবশেষে, ক্ষত বিক্ষত হয়ে, ২ সেপ্টেম্বর আত্ম সমর্পন করলো জাপান। শেষ হলো ২য় বিশ্বযুদ্ধ।
কিন্তু, বিশ্ব????
বিশ্ব হলো ধ্বংস স্তুপ।
হতাহত হলো ৫--৮। কোটি মানুষ। ১ম বিশ্বযুদ্ধের অতিরিক্ত শাস্তি, হিটলারের মনোভাব, উগ্র জাতীয়তা বোধ, কাণ্ডজ্ঞান হীণতা, হলোকাস্টের ঘটনা সহ অনেক কারণ ছিলো এ যুদ্ধের নৈপথ্যে।
কিন্তু, শিক্ষা একটাই -
যুদ্ধ কখনো শান্তি আনে না।
জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা হলো, মেরুকরণ সৃষ্টি হলো।
পূর্ব পশ্চিম বিভক্ত হলো।
জার্মানিও ভাগ হলো।
বিভিন্ন জোটের সৃষ্টি হলো।
ইউএসএ। এবং ইউএসএসআর এর উত্থান হলো।
পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্র, দুটো যাত্রা শুরু হলো।
বিশ্বনেতাদের ভুলের মাশুল দিতে সাধারণ জনগন ভেসেই গেল। এরপর,ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে মানবতার চরম পরিণতি দেখল।
কিন্তু যুদ্ধ কি আসলেই শেষ হয়েছিল?
স্নায়ুর সন্দেহের কারণে, শুরু হলো ঠাণ্ডা যুদ্ধের।
ব্যাপক প্রসার পেল, অস্ত্র ব্যবসা। গোপনে চলল, পারমাণবিক বোমার যাত্রা।
হায়, কি শিক্ষা নিল বিশ্ব???
বি:দ্র:
★এ লেখায় তথ্যের জন্য উইকিপিডিয়া থেকে সহায়তা নেয়া হয়েছে।
★এটি তথ্যমূলক নয়, বণর্নামূলক।
★সহজ ভাবে, লিখতে গিয়ে কিছু উল্লেখ করিনি।
★আমার কিছু নিজস্ব মতামত ফুটে ওঠেছে। যা নিতান্তই আমার ধারণা।

No comments:

Post a Comment