Tuesday, 8 November 2016

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আদ্যপান্ত ,


প্রতি চার বছর পর পর অনুুষ্ঠিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনের রয়েছে অনেকগুলো ধাপ। প্রথমে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ ও দূরদর্শিতা প্রদর্শন করে দলের সমর্থকদের মন জয় করে দলীয় মনোনয়ন পেতে হয়। সবার শেষে দলের জাতীয় সম্মেলনে চূড়ান্তভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়। এরপর নির্বাচনের দুই-তিন সপ্তাহ আগে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। মূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বরের ২ থেকে ৮ তারিখের মাঝের মঙ্গলবার। সে হিসেবে এবার ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, উচ্চকক্ষ সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ এবং ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা নির্বাচিত হন এ দিন। নির্বাচনের পর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের ভোটে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সবশেষে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন পরের বছরের ২০ জানুয়ারি।
.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া/ধাপসমূহ
.
নিম্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া/ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:
.
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা :
.
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৩৫ বছর বয়সী এবং তৃতীয়ত, অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হবে। তৃতীয়ত, কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিত
া করতে পারেন না, এটাও প্রার্থিতার শর্তের অন্তর্ভুক্ত।
.
প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি ও ককাস দলীয় মনোনয়ন :
বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে দলীয় গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে দলীয় গণতন্ত্রের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে বড় দুটি দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে প্রাইমারি ও ককাস বলে। এর মাধ্যমে দলীয় প্রতিনিধি বা ডেলিগেট নির্বাচিত হয়। যারা জাতীয় কনভেনশনে গিয়ে দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। এর আয়োজন করে থাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। ৫০টি রাজ্যেই আগে পরে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয়। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের প্রতিনিধি নির্বাচন অধিকাংশ রাজ্যে একই দিন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া দুই দলের ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোনো রাজ্যে সাধারণ জনগণ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কোনো একটি দলের মাত্র একজন মাত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। প্রাইমারি নির্বাচন অনেকটা সাধারণ নির্বাচনের মতো। ককাসের ক্ষেত্রে দলীয় সদস্যরা নির্ধারিত দিনে একটি নির্ধারিত জায়গায় মিলিত হয়ে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে, এ বিভক্তিকে ককাস বলে। সমর্থনের আধিক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।
.
প্রাইমারির মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দলীয় প্রতিনিধি বা ডেলিগেট নির্বাচিত হয়। অবশ্য বছর বছর দুুটি দলেই দলীয় প্রতিনিধি পরিবর্তন হয়। এবার রিপাবলিকান দলের দলীয় প্রতিনিধির সংখ্যা ২,৪৭২। এর মধ্যে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে কমপক্ষে ১,২৩৭টি দলীয় প্রতিনিধির ভোট পেতে হবে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে ৪,৭৬৩ দলীয় প্রতিনিধি ভোটের মধ্যে ২,৩৮৩টি ভোট পেতে হবে। ইতোমধ্যে আপনার জানেন যে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনয়ন পেয়েছেন।
.
সুপার টিউসডে :
.
সুপার টিউসডে এমন একটি দিন, যেদিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে প্রথম এটি শুরু হয়। ২০০০ সালের ৭ মার্চ একসঙ্গে ১৬টি রাজ্যে প্রাইমারি নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে সুপার টিউসডে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এবার ১২টি অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয় ১ মার্চ ২০১৬।
.
দলীয় সম্মেলন :
প্রাথমিক পদক্ষেপ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধান বড় দুটি দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীরা প্রার্থী মনোনয়নে সম্মেলনের আয়োজন করে। ১৮ জুলাই ওহাইওতে রিপাবলিকান ও তার এক সপ্তাহ পর ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের প্রশংসাসূচক বাক্যালাপে প্রার্থীকে বরণ করা হয়। এবার ২৫ জুলাই ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে দলীয় প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন।
.
তিন পর্বে প্রেসিডেন্ট বিতর্ক :
নির্বাচনের কিছুকাল আগে তিন পর্বের প্রেসিডেন্ট বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এই বিতর্ক স্বাধীন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এ বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। এই বিতর্ক কোনো প্রার্থীর পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তিনটি বিতর্কেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জয়ী হয়েছেন।
.
ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থা :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২নং ধারা অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও উপ-প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে পদ্ধতি অনুসারে নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট এবং তার পরবর্তী ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে উপ-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো। ১৮০০ সালের নির্বাচনে দুজন প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট লাভ করায় সংকট দেখা দেয়। ফলে ১৮০৪ সালের সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টর জন্য পৃথক নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়।
.
ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য কারা :
তার আগে বলে নিই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সিনেটের ১০০ সদস্য এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়। এই যে প্রতিনিধি সভার ৪৩৫ জন, সিনেটর ১০০ জন এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আরো ৩ জনÑমোট ৫৩৮ জনের সমান ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্বাচন করা হয়। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে প্রত্যেক প্রার্থী নিজের অথবা তার দলের পছন্দ অনুযায়ী ইলেকটর মনোনয়ন দেন। মেইন ও নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি সব ক’টি অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশি পপুলার ভোট পান, সে রাজ্যে তার মনোনীত ইলেকটোরাল কলেজের সবাই জিতলেন বলে বিবেচিত হন।
.
২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট না পেলে কী করা হয় :
কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজের প্রয়োজনীয় ২৭০ ভোট না পেলে প্রেসিডেন্ট নির্র্বাচনের দায়িত্ব চলে যায় কংগ্রসের হাতে। মার্কিন সংবিধানের ২২নং সংশোধনী অনুসারে, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে উপ-প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচিত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সিনেট সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যর্থ হলে উপ-প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাবেন। যদি উপ-প্রেসিডেন্টও নির্বাচন করা না যায় সে ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হবেন।
.
ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার কারণ :
পপুলার ভোটের ভিত্তিতে না হয়ে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে কেন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়? এর কারণ হলোÑ
আমরা জানি, জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি রাজ্যের জন্য ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করা হয়। নিউইয়র্ক ও ক্যালির্ফোনিয়ার মতো রাজ্যে ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। এখন যদি প্রেসিডেন্ট শুধু বড় ও জনবহুল কয়েকটি রাজ্য যেমনÑক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউ ইয়র্ক, ওহাইও, ফ্লোরিডা, ইলিনয়, প্যানসিলভানিয়া ইত্যাদি রাজ্যের দ্বারাই পপুলার ভোট পেয়েই নির্বাচিত হয়ে যান, তাহলে তিনি পুরো দেশের জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়েই ক্ষমতায় চলে যাবেন এবং দেশের নির্বাচনে ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট বাকি রাজ্যগুলোর কোনো মূল্যই থাকবে না, যা মার্কিনিদের মতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীত। তাই পুরো দেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্যই ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কিছুটা হলেও পরোক্ষ নির্বাচন।
.
ফল ঘোষণা ও শপথ গ্রহণ :
নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরো দুই মাস। ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন ইলেকটরেটরা। পরের বছরের জানুয়ারির ৬ তারিখে কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল ভোট গণনা করা হয়। সিনেটের সভাপতির তদারকিতে ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।
.
সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নাও হতে পারেন
.
মূলত, নির্বাচনে একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিলেও মূলত ভোটাররা ইলেকটর নির্বাচনের জন্যই ভোট দেন। আর ইলেকটরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তাই দেখা যায়, পপুলার ভোট বা দেশের মোট ভোট বেশি পেয়েও কেউ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন না। যেমনটা আমরা দেখি ১৮২৪, ১৮৭৬, ১৮৮৮, ২০০০ সালের নির্বাচনে। ২০০০ সালের নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে ১০ লাখ বেশি পপুলার ভোট পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হবে। একটু আগে আমরা বলছিলাম, যে অঙ্গরাজ্যে যে দল অধিকাংশ ভোট পাবেন সে রাজ্যের সব ক’টি ইলেকটোরাল প্রতিনিধি সে দলের হবে। মাত্র ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েও তা হতে পারে আবার তা ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকটোরাল প্রতিনিধির সংখ্যা ৫৫। জয়ী পার্টি পেল ৫১ শতাংশ ও বিজিত পার্টি পেল ৪৯ শতাংশ ভোট। এক্ষেত্রে ৫৫ জন প্রতিনিধি হবে বিজয়ী দলের। সুতরাং পপুলার ভোট কম পেয়েও ইলেকটোরাল ভোট বেশি পেয়ে একজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন।
.
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য :
.
প্রথমত
.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন গণতান্ত্রিক হলেও কিছুটা পরোক্ষ। কারণ পপুলার ভোট যে যতই পান না কেন, মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে ন্যূনতম ২৭০টি না পেলে নির্বাচিত হওয়া যায় না। এই ৫৩৮-এর ধাঁধায় একজন প্রার্থী বেশি পপুলার ভোট পেয়েও নির্বাচনে হারতে পারেন।
.
দ্বিতীয়ত
.
জাতীয় নির্বাচন হলেও কোনো একক জাতীয় নিয়মের ভিত্তিতে হয় না এই নির্বাচন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য তার নিজস্ব নিয়ম ও আইনের ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। কোনো অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশিরভাগ পপুলার ভোট পান, সে রাজ্যে তার মনোনীত ইলেকটোরাল কলেজের সবাই জিতলেন বলে বিবেচিত হন। কিন্তু মেইন এবং নেব্রাস্কার বেলায় এ সরল নিয়ম কাজ করে না। ওই দুই রাজ্যে যে প্রার্থী পপুলার ভোটে জয়লাভ করেন, তিনি পান রাজ্যের দুই সিনেটরের বিপরীতে দুটো ইলেকটোরাল কলেজ, বাকিগুলো নির্ভর করে রাজ্যজুড়ে আনুপাতিক প্রাপ্ত ভোটের ওপর। অর্থাৎ যে প্রার্থী যে কয়টি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে জেতেন, তিনি পান আরো ততটি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট।
.
তৃতীয়ত
মার্কিন রাজনীতি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলকেই ঘিরেই আবর্তিত। রিপাবলিকানরা কনজারভেটিভ, তারা করপোরেট আমেরিকা এবং সুপার ধনীদের স্বার্থই বেশি করে দেখেন, মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের দোসর, কারণে-অকারণে যুদ্ধ বাধাতে চান। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি লিবারেল, তারা প্লুরেলিজমে বিশ্বাস করেন, অভিবাসী ও ছোট জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল, গরিব ও মধ্যবিত্তদের স্বার্থের ব্যাপারেও অধিক যতœবান ও সংবেদনশীল। এর বিপরীতে দেখা যায়, রিপাবলিকান পার্টি কনজারভেটিভ মূল্যবোধ এবং জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নির্বাচনে জিততে চান।
.
চতুর্থত
.
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রাজ্য রেড স্টেট, মানে সেখানে রিপাবলিকানরাই সংখ্যগরিষ্ঠ। কিছু রাজ্য ব্লু স্টেট, মানে সেখানে ডেমোক্র্যাট পার্টির শক্ত অবস্থান। আর কিছু রাজ্য টসআপ/সুয়িং স্টেট, মানে উভয় দিকে যেতে পারে। দেখা যায়, ব্লু এবং রেড জোনে বলতে গেলে কোনো প্রচারণা চলে না। কারণ ওই রাজ্যগুলো ঐতিহাসিকভাবে নিজ নিজ দলের বাঁধা ভোট। ঝুলন্ত কিংবা সুইং স্টেটগুলোতেই চলে দুই দলের তুমুল প্রচারণা। এই সুইং স্টেটের মধ্যে বড় তিনটি স্টেট হলোÑপেনসিলভানিয়া, ওহাইও এবং ফ্লোরিডা। বলা হয়ে থাকে, এ তিন রাজ্যের মধ্যে যে দুটো পান, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
.
নির্বাচন পূর্ব জরিপের ফল :
সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভারে ই-মেইল চালাচালি নিয়ে নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দেয় এফবিআই। এতে হিলারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। খানিকটা বেকায়দায় পড়লেও তা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। বিভিন্ন জরিপে এখনো হিলারিই এগিয়ে রয়েছেন। সর্বশেষ (০৫ নভেম্বর ২০১৬) সিএনএন ও ওআরসির যৌথ জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৯ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৪ শতাংশ; আর সিএনএনের নিজস্ব জরিপে হিলারি ৪৭ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটার সমর্থন দিয়েছেন।
.
নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৫.৪ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪২.৮ শতাংশ; এবং এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৭ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ শতাংশ সমর্থন দেখানো হয়েছে।
.
জাতীয়ভাবে পরিচালিত কয়েকটি জরিপের ফল গড় করে জরিপ সংস্থা রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্স জানায়, সারাদেশে হিলারি ১.৭ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। হিলারির সমর্থন রয়েছে ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্পের সমর্থন ৪৫.৩ শতাংশ।
.
এরই মধ্যে দেশটি ৩৮টি রাজ্যের তিন দুই কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ‘আগাম ভোটে’ও এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
.
সিএনএ.নের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হিলারি ২৭২টি এবং ট্রাম্প ১৭৯টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে যাচ্ছেন। বাকি ৮৭টি রাজ্যে টপ-আপ হবে, মানে যে কেউ জিততে পারেন। জরিপ সংস্থা রিয়ালক্লিয়ারপলি
টিক্সের মতে, ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের জরিপেও হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। তাদের ধারণা, হিলারি ২২৬টি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন। অন্যদিকে ট্রাম্প মাত্র ১৮০টি ভোট পেতে পারেন। বাকি রাজ্যগুলোতে যে কেউ জিততে পারেন।
.
মার্কিন. কংগ্রেস ও সিনেট :
এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলতে চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সিনেটের ১০০ সদস্য এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ সদস্য নির্বাচিত হয়। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ দুই বছর মেয়াদি। তারা একেকটি আসন/জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরা ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি দুই বছর অন্তর সিনেটের এক তৃতীয়াংশের নির্বাচন হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে দুজন করে সিনেটর থাকেন। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ সমান ভূমিকা পালন করে। প্রতিনিধি পরিষদ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। সিনেটরদের প্রভাব প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে এবং তারা তাদের রাজ্যের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকেন। আর এই সিনেটররাই পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট, উপ-প্রেসিডেন্ট ও রাজ্য গভর্নর হয়ে থাকেন।
.
দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাস ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলকেই ঘিরে আবর্তিত। সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা মূলত দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এ দুটি দলই নির্বাচনে রাজনীতি এবং সরকারি ক্ষমতা অর্জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। দক্ষিণের ভোটাররা ডেমোক্র্যাটিক দল এবং উত্তরের ভোটদাতাদের মধ্যে রিপাবলিকান দলের পক্ষে ভোট দানের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ দুটি দল ছাড়াও সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কে লেবার পার্টি, লিবারেল পার্টি এবং কনজারভেটিভ দলের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ঊনবিংশ শতাদ্বীর শেষ এবং বিশ শতাব্দীর শুরুতে পপুলিস্ট ও প্রগ্রেসিভ দলের প্রভাব ছিল।
.
অক্টোবর সারপ্রাইজ :
নির্বাচনের ঠিক আগে অক্টোবর মাসে কোনো প্রার্থীকে ধরাশায়ী করতে প্রতিপক্ষ কর্তৃক উত্থাপিত প্রচ- সংবেদনশীল ইস্যু, প্রতিশ্রুতি বা অভিযোগ ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমনÑএফবিআই’র পরিচালক জেমস বি কমি মার্কিন নির্বাচনের দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকতে এমন একটা সারপ্রাইজ দিলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, হিলারি ক্লিনটনের আরো ইমেইল তদন্ত করছে তার সংস্থা এফবিআই, যা হিলারির সমর্থন কমিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা হিলারির জয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না অনেকে মনে করেন। একইরকমভাবে নির্বাচনের শেষ সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠাও একটি ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
.
প্রধান দুই প্রার্থীর পরিচিতি
.
হিলারি ক্লিনটন :
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি ১৯৪৭ সালে শিকাগোর ইলিয়নসে জন্মগ্রহণ করেন। সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিলারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্র
ী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া বিভিন্ন জনমত জরিপের বেশিরভাগেই তিনি এগিয়ে রয়েছেন। হিলারি জয়ী হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঘটনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হিলারির স্বামী।
.
ডোনাল্ড ট্রাম্প :
রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবাসন ব্যবসায়ী ধনকুবের ট্রাম্পের রাজনীতিতে পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস ও আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে তিনি প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন, দেশে-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। সর্বশেষ নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন জনমত জরিপে তিনি কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও হিলারির ই-মেইল বিতর্কের কারণে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
.
অন্যান্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পরিচয়
.
গ্যারি জনসন :
লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন গ্যারি জনসন। ১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিউ ম্যাক্সিকোয় রিপাবলিকান গভর্নর ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়নের লড়াইয়েও ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে সরে এসে লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এবিসি নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঁচ শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি একজন সাবেক নির্মাণ ব্যবসায়ী।
.
জিল স্টেইন :
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন জিল স্টেইন। পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার স্টেইন। দুই-দলীয় যে ধারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে তিনি তার বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও স্টেইন গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবিসি নিউজের জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুই শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
.
ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরিচয়
.
টিম কেইন :
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের রানিংমেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট) ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন। ৫৮ বছর বয়সী সিনেটর টিম কেইন গর্ভপাতবিরোধী এবং মুক্তবাণিজ্য চুক্তির একজন সমর্থক। অনর্গল স্প্যানিশ ভাষা বলায় পারদর্শী কেইন আসন্ন নির্বাচনে প্রচারণায় হিস্প্যানিক আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে হিলারির সমর্থন ধরে রাখার ব্যাপারে সহায়তা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে হিস্প্যানিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি গর্ভপাতকে প্রত্যাখ্যান করলেও গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেন।
.
মাইক পেন্স :
রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিংমেট (ভাইস-প্রেসিডেন্ট) ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মাইক পেন্স। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে পেন্স ১২ বছর ওয়াশিংটনে কংগ্রেস সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গর্ভপাতবিরোধী কঠোর অবস্থানে থাকা ইন্ডিয়ানার গভর্নর পেন্স ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনেও স্বাক্ষরকারী। অনেকেই এই আইনটিকে সমকামিতা-বিরোধী আইন হিসেবেই দেখছেন।
.
হিলারি ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি
.
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাঝে অনেক বিষয়ে স্পষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। হিলারি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব বিশ্বে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ধরে রাখা। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। নিম্নে বিভিন্ন ইস্যুতে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যকার মতের ভিন্নতা তুলে ধরা হলো :
.
সিরিয়া :
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাশারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেয়ে আইএসকে ধ্বংস করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের মতে, প্রেসিডেন্ট বাশার আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত নন হিলারি। ট্রাম্পের মতে বাশারকে উৎখাত করা হলে সিরিয়া সংকট আরো বাড়তে পারে।
.
ন্যাটো :
ট্রাম্প ন্যাটোকে সেকেলে বলেছেন এবং ন্যাটোর অনেক সদস্যকে অকৃতজ্ঞ বলেছেন। তার মতে, ন্যাটোর অনেক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা লুটছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ ও এশিয়ায় তার মিত্রদের নিরাপত্তার জন্য এত অধিকহারে ব্যয় করে যেতে পারবে না। মিত্রদেশগুলোকে নিজেদেরই নিরাপত্তা ব্যয় বহন করতে হবে। ন্যাটোর দেশগুলো জিডিপির দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় না করায় তাদের তীব্র সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার ন্যায় হিলারি ক্লিনটনও ন্যাটোর ওপর খুবই আস্থাশীল। হিলারি ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকে অন্যতম সেরা বিনিয়োগ বলেছেন।
.
রাশিয়া :
হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ন্যাটোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইউরোপে জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গুজব রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে তার যোগসাজশ রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে তার এক সময় ব্যবসা ছিল। তার কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন যাদের রাশিয়ার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রয়েছে।
.
ইসলামিক স্টেট (আইএস) :
হিলারি ও ট্রাম্প দুজনই ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বললেও ট্রাম্প ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথা বলছেন। তিনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা না করায় ওবামা প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হিলারি ও ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় যথেষ্ট মিলও রয়েছে। দুজনই সম্মুখযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা নামাতে চান না। বরং আরব দেশগুলোকে সামরিক সহায়তা বাড়াতে বলেছেন। ট্রাম্প সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে অভিযান চালানোর এবং যুদ্ধ বন্দিদের কাছ থেকে কথা বের করার জন্য আরো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। হিলারি বন্দি নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
.
আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা
.
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৬টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় এমন ব্যবস্থা আছে, যাতে করে ভোটাররা চাইলে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগেই ভোট দিতে পারেন এবং এজন্য তাদের কোনো কারণ দেখাতে হয় না। বাকি ১৩টি অঙ্গরাজ্যে কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিতভাবে অর্থাৎ ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে ‘আগে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা’ বা ‘আর্লি ভোটিংয়ের’ ব্যবস্থা আছে, সেখানে সশরীরে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি আছে। এ ছাড়া আছে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। অধিকাংশ রাজ্যেই ডাকযোগে ভোট দিতে চাইলে আগে থেকে অনুরোধ করতে হয়, কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হবে যে, তিনটি অঙ্গরাজ্য আছে যেখানে নির্বাচনের আগেই ভোটারদের কাছে ব্যালট পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা চাইলে ডাকযোগে বা সশরীরে ভোট দিতে পারেন। এই তিনটি অঙ্গরাজ্য হচ্ছে ওয়াশিংটন, অরিগন ও কলোরাডো। এ ব্যবস্থা অরিগন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় ১৯৯৮ সালে, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় ২০১১ সালে এবং কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ২০১৩ সালে। এই তিনটি রাজ্যেই অবশ্য নির্বাচনের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে থেকে কিছু কিছু ভোটকেন্দ্র খোলা থাকে, যাতে করে ভোটাররা চাইলে সশরীরে ভোট দিতে পারেন এবং অবশ্যই নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র খোলা রাখা হয়, তবে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা থাকে কম।
.
আগে আগে ভোট দেওয়ার এই ব্যবস্থা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় বিভিন্ন সময়ে। সবচেয়ে আগে যেখানে ভোট দেওয়া শুরু হয়েছে তা হলো মিনেসোটা এবং সাউথ ডাকোটা, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে ভোট প্রদান শুরু হয়েছে। আইওয়াতে শুরু হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর (প্রথম আলো, ০৮ অক্টোবর ২০১৬)।
.
প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভোট কি একই সঙ্গে
.
সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও তার রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে এক টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিত
া করেন। ভোটারদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য একটি টিকিট দেওয়া হয়। তারা একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়ে তার রানিংমেট ছাড়া অন্য প্রার্থীর রানিংমেটকে ভোট দিতে পারেন না।
.
নির্বাচন কেন মঙ্গলবার, কেন নভেম্বর
.
বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই ভোটারদের ভোট দেওয়ার হার সবচেয়ে কম। ব্যস্ততার কারণে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যান না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুরুর দিকে ছুটির দিনে নির্বাচনের আয়োজন করেও কোনো লাভ হয়নি। ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন নির্দিষ্ট করা হয়। ওই নিয়ম চালুর সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে কাছের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনেক সময় লেগে যেত কৃষকদের। শনিবার ছিল ফসলের মাঠে কাজের দিন। ধর্মকর্মের কারণে রোববার দূরে যাওয়া যেত না। আর বুধবার ছিল বাজারের দিন। মাঝখানে বাকি রইল মঙ্গলবার। এ কারণেই মঙ্গলবারকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
.
আর মাস হিসেবে নভেম্বরকে বেছে নেওয়ার কারণ সে সময় নভেম্বর মাস পড়তে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে ফসল কাটা শেষ হয়ে যেত। নভেম্বরের শেষ হতেই শীত নামত জাঁকিয়ে। তাই ভোটের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নভেম্বর মাসকে।
.
.নেসার আমিন
লেখক : সহযোগী সমন্বয়কারী
সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক

No comments:

Post a Comment