Sunday, 6 November 2016

৩৭তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি


-----
জলবায়ু পরিবর্তন
# কার্যকর_হলো_প্যারিস_জলবায়ু_চুক্তি
২০১৫-এর নভেম্বর মাসে বিশ্ববাসীর আশঙ্কা ছিল ফ্রান্সের প্যারিসের সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তি আদৌ হবে কি না। অনেক আলোচনা-আপস ও সমঝোতার পর ২২ ডিসেম্বর প্রতীক্ষিত সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বের ১৯২টি দেশ। তারপর প্রতীক্ষা—রাষ্ট্রগুলো কবে ওই চুক্তি অনুমোদন বা অনুস্বাক্ষর করবে। গত মাসে তা-ও হলো। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ
৮৪টি দেশ এই চুক্তি তাদের নিজেদের সংসদে অনুমোদন বা এতে অনুস্বাক্ষর করেছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএফসিসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ প্যারিস চুক্তিতে অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণকারী ৯৪টি দেশ তা অনুমোদন করে ফেলেছে। ফলে ৭ নভেম্বর মরক্কোর মারাকেশে শুরু হতে যাওয়া ২২তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগেই, গতকাল ৪ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ওই চুক্তি কার্যকর হওয়া শুরু হয়ে গেল।
প্যারিস চুক্তিতে নতুন সংযোজন হিসেবে কার্বন নিঃসরণ কমানোর স্বপ্রণোদিত অঙ্গীকারনামা বা আইএনডিসি দলিলটি জাতীয় অঙ্গীকারনামায় (এনডিসি) রূপান্তর হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে যে অঙ্গীকার করেছে, তা জাতীয় অঙ্গীকার হিসেবে গণ্য হবে। শিল্পোন্নত দেশগুলোকে সেই অঙ্গীকার পূরণে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু না করলে তাদের কোনোভাবে বাধ্য করা যাবে না। তবে চুক্তির অন্যতম দুর্বলতা হলো, ধনী দেশগুলোও যদি অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ না কমায়, তাহলেও জাতিসংঘের এ ব্যাপারে কিছু করার থাকবে না।
এসব সমালোচনা মাথায় নিয়েই জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে কিওটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোনো চুক্তিই থাকছিল না, সেখানে বিশ্বের সবগুলো রাষ্ট্রকে সম্মত করে একটি চুক্তি হয়েছে এটাও কম কিসের। কারাকাস সম্মেলন থেকে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। তখন এসব নিয়ে অনেক আলোচনা ও শর্ত যুক্ত হওয়ার সুযোগও থাকবে বলে মনে করছেন এসব বিশেষজ্ঞ।
বিশ্বের কোন দেশ কী পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ কমাবে তার যে অঙ্গীকারনামা প্যারিস সম্মেলনে রাষ্ট্রগুলো উপস্থাপন করেছিল, তার প্রয়োগ কীভাবে হবে তা মরক্কোতে আলোচনা হবে। প্যারিস চুক্তির চূড়ান্ত খসড়ায় কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর নানা উদ্যোগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির শর্ত যুক্ত হয়েছে।
ফলে ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে কোন রাষ্ট্র কী পরিমাণে অর্থ পাবে তা নির্ভর করবে কোন দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা কতটুকু স্বচ্ছ।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় কতটা সক্ষম, তার একটি পরীক্ষাও দিতে হবে। তহবিল পেতে হলে আমাদের বিভিন্ন খাতের ওপরে প্রকল্প তৈরি করতে হবে। ভারতের মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক কার্বন তহবিল সিডিএম থেকে অর্থ পাচ্ছে। বাংলাদেশকেও এ ধরনের সুযোগ বের করতে হবে।’
অন্যদিকে সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) কর্তৃপক্ষ অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে জাতীয় বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ বা ন্যাশনাল ইমপ্লিমেন্টেশন এনটিটিকে (এনআইই) সেই পরীক্ষা দিতে হবে। সবুজ জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে বাংলাদেশের কোনো সংস্থাই এখনো জিসিএফ থেকে এনআইইর অনুমোদন পায়নি। সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা জিসিএএফের কাছে নিজেদের এনআইই স্বীকৃতি চেয়েছিল।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এনআইই হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উত্তরণ ঘটাতে হবে। আর জিসিএফ থেকে অর্থ পেতে হলে এমন সব প্রকল্প নিতে হবে যা একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমায় আবার সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখে। যেমন উন্নত চুলা ও সৌরশক্তি।---

No comments:

Post a Comment